বিজয় দিবসরচনা

বিজয় দিবস রচনা 2024

বিজয় দিবস, যা প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর উদযাপন করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল। এ দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও গর্বের প্রতীক। বিজয় দিবসের তাৎপর্য এবং এ দিনটি উদযাপন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমাদের সেই গৌরবময় ইতিহাস এবং স্বাধীনতার জন্য প্রদত্ত আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিজয় দিবসের ইতিহাস

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যমূলক শাসন চালায়। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক নিপীড়ন দিন দিন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বিদ্রোহী করে তোলে।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় এবং সরকার গঠনের বৈধ অধিকার অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এই রাজনৈতিক সংকটের সূত্র ধরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বর্বরোচিত হামলা চালায়, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।

এর পরেই শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন এবং অসংখ্য নারী নির্যাতিত হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, এবং বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার স্বীকৃতি পায়।

বিজয় দিবস উদযাপন

বিজয় দিবস শুধু একটি দিবস নয়; এটি একটি আবেগ, একটি চেতনাকে উদযাপনের দিন। সারা দেশে এ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি:

এই দিনে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সাধারণ জনগণ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়, যারা তাদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন।

পতাকা উত্তোলন:

বিজয় দিবসের সকালে প্রতিটি বাড়ি, অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক এবং দেশের প্রতি গর্বের বহিঃপ্রকাশ।

শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:

বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন এই দিনে শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। দেশাত্মবোধক গান, নাটক এবং কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে এ দিনটির গৌরব উদযাপন করা হয়।

বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ:

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবস উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখা তাদের সামরিক দক্ষতা প্রদর্শন করে।

বিজয় দিবসের গুরুত্ব

বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অমর করে রাখার দিন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা কতটা মূল্যবান এবং এটি অর্জনে কত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

দেশপ্রেম জাগ্রত করা:

বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তোলে।

শিক্ষণীয় অধ্যায়:

বিজয় দিবস আমাদের শিখিয়ে দেয় যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এটি আমাদের সাহসিকতা এবং সংকল্পের প্রতীক।

আমাদের দায়িত্ব

বিজয় দিবস উদযাপন কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের উচিত এ দিনটির মাধ্যমে স্বাধীনতার মূল্যবোধ উপলব্ধি করা এবং তা রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।

  1. ইতিহাস সংরক্ষণ:
    আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
  2. দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা:
    আমাদের প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।
  3. শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা:
    যারা তাদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *