ছন্দবিজয় দিবস

বিজয় দিবস ছন্দ 2024

বিজয় দিবস। ১৬ই ডিসেম্বর, এক গৌরবময় দিন। এটি শুধু একটি তারিখ নয়; এটি একটি জাতির জেগে ওঠার, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া লক্ষ প্রাণের অমলিন স্মৃতি। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। বিজয়ের এই দিনে বাংলার আকাশে গর্জে উঠেছিল আনন্দের ধ্বনি, মিশে ছিল অশ্রু, বিজয়গান ও আত্মত্যাগের স্মৃতি।

ছন্দে ছন্দে বিজয়ের কাব্য

বিজয় দিবস মানেই এক একটি ছন্দের কাব্য। তা হোক কবিতার ভাষায়, গান কিংবা স্মৃতিচারণের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মায়ের কোলে শিশুর কান্না, রক্তঝরা শহীদের ত্যাগ, বীর সেনাদের লড়াই—সব মিলিয়ে বিজয়ের গল্প যেন এক ছন্দময় কবিতা। এই কবিতায় বেদনার পাশাপাশি রয়েছে অদম্য সাহস আর বিজয়ের আনন্দ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল অস্ত্রের লড়াই নয়, এটি ছিল একটি জাতির পরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই লড়াইয়ে যেমন সাহসিকতার ছন্দ বাজে, তেমনি কাঁদিয়ে তোলে নিরীহ মানুষের ত্যাগ ও শহীদদের আত্মাহুতি।

বিজয়ের চেতনায় গড়া প্রজন্ম

বিজয় দিবস আমাদের শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই দিনে শিখতে হবে ত্যাগের মূল্য, স্বাধীনতার অর্থ এবং জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ।

আজকের দিনে আমরা বিজয়ের ছন্দে স্মরণ করি সেই সব মহান মানুষদের, যাঁরা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন। যুদ্ধের ময়দানে জীবন উৎসর্গ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে মুক্তিকামী জনতা—তাঁদের সবার প্রতি জাতির হৃদয় থেকে গভীর শ্রদ্ধা।

ছন্দে ছন্দে উদযাপন

প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশজুড়ে চলে বিভিন্ন রকমের উদযাপন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, দেশাত্মবোধক গান এবং নাটক পরিবেশনার মাধ্যমে এ দিনটি উদযাপন করা হয়। কবিদের কলমে লেখা হয় নতুন কবিতা, যেখানে বিজয়ের রঙ ছুঁয়ে যায় প্রতিটি শব্দ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ছন্দের মধ্যে যে গৌরব লুকিয়ে থাকে, তা উদযাপনের প্রতিটি অনুষ্ঠানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিজয়ের গান, কবিতা, আবৃত্তি ও নাটকে ফুটে ওঠে জাতির বীরত্বগাথা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজয়ের বার্তা

আজকের বাংলাদেশ, যেটি ক্রমাগত উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, এই বিজয় তারই সূচনা করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা মানে শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিরও প্রতীক। বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা একসঙ্গে কাজ করলে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সাফল্যের ছন্দ বাজাতে পারি।

আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বৈষম্যমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অনন্য অধ্যায়। এদিন আমরা শুধু ইতিহাসকে স্মরণ করি না, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য সেই গৌরবের ছন্দ শিখিয়ে দিই। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা যেন কখনো বৃথা না যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *